করোনা সন্দেহ হলে যা করবেন

শরীরে হালকা জ্বর, খুশ খুশ করে কাশছেন—সন্দেহ হতে পারে, করোনা নয় তো? কারণ বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই করোনার কারণে সৃষ্ট রোগ কোভিড–১৯–এর প্রকাশ ঘটে জ্বরের মাধ্যমে। এমন অবস্থায় কী করবেন? জ্বর হলেই হাসপাতালে ছুটবেন?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, না, জ্বর হলেই হাসপাতালে ছোটার দরকার নেই। কারণ এই রোগ খুবই সংক্রামক। এতে একজন থেকে অন্যজন, এমনকি হাসপাতালের অন্য রোগীরাও আক্রান্ত হতে পারেন।

তাহলে এমন অবস্থায় করণীয় কী? সরকারের রোগতত্ত্ব, রোগনিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউট (আইইডিসিআর) বলছে, সন্দেহভাজন রোগীকে প্রাথমিকভাবে ঘরেই থাকতে হবে।

এই রোগ নিয়ে এত আতঙ্কের কারণ হচ্ছে এখন পর্যন্ত এর কোনো টিকা বা প্রতিষেধক আবিষ্কৃত হয়নি। চিকিৎসার শরু হয় লক্ষণ দেখে। আইইডিসিআরের তথ্য অনুযায়ী, এই ভাইরাস শরীরে ঢোকার পর সংক্রমণের লক্ষণ দেখা দিতে ২ থেকে ১৪ দিন সময় লাগে। বেশির ভাগ ক্ষেত্রে প্রথম লক্ষণ হয় জ্বর। এ ছাড়া শুকনো কাশি বা গলাব্যথা হতে পারে।

এ ছাড়া শ্বাসকষ্ট বা নিউমোনিয়া দেখা দিতে পারে। আক্রান্ত ব্যক্তির অন্য রোগ, যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, শ্বাসকষ্ট, হৃদ্‌রোগ, কিডনির সমস্যা, ক্যানসার ইত্যাদি থাকলে অরগ্যান ফেইলিওর বা দেহের বিভিন্ন প্রত্যঙ্গ বিকল হতে পারে।

প্রতিষেধক না থাকায় এর প্রতিরোধে সচেতন হওয়াই এখন পর্যন্ত কার্যকর উপায়। এ জন্য ঘন ঘন সাবান ও পানি দিয়ে ভালো করে হাত ধুতে হবে, অপরিষ্কার হাতে চোখ, নাক ও মুখ স্পর্শ করা থেকে বিরত থাকতে হবে, ইতিমধ্যেই আক্রান্ত হয়েছেন—এমন ব্যক্তিদের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, হাঁচি-কাশির শিষ্টাচার মেনে চলতে হবে, অসুস্থ পশুপাখির সংস্পর্শ এড়িয়ে চলতে হবে, মাছ-মাংস ভালোভাবে রান্না করে খেতে হবে।

এ ছাড়া যতটা সম্ভব ঘরে থাকতে হবে, প্রয়োজন ছাড়া বাড়ির বাইরে না যাওয়া ও জনসমাগম এড়িয়ে চলতে হবে। আর এই মুহূর্তে বিদেশ থেকে কেউ এলে তাঁকে বাধ্যতামূলকভাবে ১৪ দিন কোয়ারেন্টিনে থাকতে হবে।

কারও জ্বর বা সর্দি-কাশি হলে ফোনে চিকিৎসকের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রাথমিক চিকিৎসা নিতে হবে। এরপরও অবস্থার উন্নতি না হলে বা কারও মধ্যে করোনার লক্ষণ দেখা দিলে সন্দেহভাজন ব্যক্তিকে নাক-মুখ ঢেকে (মাস্ক ব্যবহার) বাড়িতে অপেক্ষা করতে হবে। অবস্থা খারাপ হলে নিকটস্থ সদর হাসপাতালে যোগাযোগ করতে হবে।

প্রয়োজনে আইইডিসিআর এর করোনা কন্ট্রোল রুম (০১৭০০৭০৫৭৩৭) অথবা হটলাইন নম্বরে (০১৯৩৭১১০০১১, ০১৯৩৭০০০০১১, ০১৯২৭৭১১৭৮৪, ০১৯২৭৭১১৭৮৫, ০১৯৪৪৩৩৩২২২, ০১৫৫০০৬৪৯০১–০৫) যোগাযোগ করা যাবে। এ ছাড়া করোনাসংক্রান্ত তথ্য জানতে বা সহযোগিতা পেতে স্বাস্থ্য বাতায়ন ১৬২৬৩ এবং ৩৩৩ নম্বরে ফোন করা যাবে।

অনলাইনে করোনা নিয়ে যোগাযোগ করতে আইইডিসিআরের ই-মেইল iedcrcovid19@gmail.com এবং ফেসবুক পেজে (Iedcr,COVID19 Control Room) যোগাযোগ করা যাবে।

Source: Prothom-Alo

গর্ভধারণে যা জানা জরুরি

একটি শিশুকে পৃথিবীর আলোয় আনার প্রধান কাজটি একজন নারীকেই করতে হয়। তাই গর্ভধারণের ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিষয় জানাটাও তার জন্য জরুরি। সন্তান ধারণে সক্ষমতা-অক্ষমতার বিষয়ে প্রচলিত অনেক বিশ্বাসের ভিত্তি যেমন নেই, আবার অনেক বিষয়ে গুরুত্ব দেওয়ার কথাও বলছেন চিকিৎসকরা।

বয়স একমাত্র বাধা নয়

অধিকাংশ সময়ই বয়স ‘৩৫’ বছর হওয়ার আগেই সন্তান জন্মদান নিয়ে পরিবার থেকে চাপ আসে একজন নারীর ওপর। ধারণা করা হয়, এরপর থেকে সন্তান জন্ম দানের ক্ষমতা কমতে থাকে। এ বিষয়ে নিউ ইয়র্কভিত্তিক ফার্টিলিটি ক্লিনিক সিসিআরএম’ এর মহাব্যবস্থাপক, ফাউন্ডিং পার্টনার ও প্র্যাকটিস ডিরেক্টর ব্রেইন লেভিন বলেন, ৩৫ বছরের চেয়েও অনেক কম বয়সী নারীরাও সন্তান জন্মদানে অক্ষম হতে পারে। তবে সন্তান ধারণের চেষ্টা না করা পর্যন্ত এটা জানা সম্ভব নয়।

সময়ের সঙ্গে কমে ডিম্বানুর মান

বয়স বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে একজন নারীর মা হওয়ার সম্ভাবনা কমতে থাকে। বিভিন্ন শারীরবৃত্তীয় কারণে সন্তান জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে ঝুঁকিও বাড়ে। ওরিগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির সহযোগী অধ্যাপক পাওলো আমাতো বলেন, “বিশেষ করে ৩০ পেরোনোর পর নারীদের ডিম্বানুর সংখ্যা ও গুণগত মান কমতে থাকে। তাই এসময় গর্ভধারণ কঠিন হয়ে পড়ে। একইসঙ্গে গর্ভপাত ও অস্বাভাবিক আচরণের সন্তান জন্মগ্রহণের ঝুঁকি বাড়ে।”

অক্ষমতা পুরুষেরও হতে পারে

সন্তান না হলে অধিকাংশ সময়ই নারীকে দায়ী মনে করা হয়। কিন্তু সন্তান ধারণের বিষয়টি একজন নয়, বরং দুজনের ওপর নির্ভর করে। ড. লেভিন বলেন, পরীক্ষা নিরীক্ষা করলে দেখা যায়, সন্তান জন্মদানে অক্ষমতার দায় আসলে ৪০ শতাংশ হল নারীর, ৪০ শতাংশ পুরুষের। বাকি ২০ শতাংশ ঘটে অজানা কারণে।

নিশ্চিত হওয়া কঠিন কিছু নয়

সিস্ট বা অন্য কোনো কারণে বন্ধ্যাত্ব বা ইনফার্টিলিটি ঘটছে কি না, তা জানতে আগে সার্জারির প্রয়োজন হত। তবে এখন চিকিৎসা ব্যবস্থার অনেক উন্নতি হওয়ায় আল্ট্রা সাউন্ড, রক্ত পরীক্ষার মাধ্যমেই এটা জানা সম্ভব।

ক্ষমতা কমে যাওয়ার বিষয়টি অনিশ্চিত

প্রত্যেকের শারীরিক গঠন আলাদা। ড. লেভিন বলেন, ব্যক্তির জীবনযাত্রার পরিবর্তনের সঙ্গেও সন্তান জন্মদানের সক্ষমতা পরিবর্তিত হতে পারে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, একজন নারী ম্যারাথনের প্রশিক্ষণ গ্রহণ করলে তার নিয়মিত ঋতুচক্র পিছিয়ে যেতে পারে। আবার সেই নারীই প্রশিক্ষণ গ্রহণ বন্ধ করে দিলে তা ঠিক হয়ে যেতে পারে।

অক্ষমতার অনেক কারণই চিকিৎসাযোগ্য

ফ্যালোপেইন টিউবের ব্লক, জরায়ুতে ফাইব্রয়েড, ডিম্বাশয়ের সিস্ট, থাইরয়েডের সমস্যাসহ সন্তান ধারণে অক্ষমতার বেশ কিছু কারণ সহজেই নিরাময়যোগ্য।

ওভ্যুলেশনের হিসেব অনুযায়ী গর্ভধারণের চেষ্টা করা

পুরো মাসের সব দিন নয়, বরং ওভ্যুলেশনের আগে ও কাছাকাছি কয়েকদিনই (৫ দিনের মতো) কেবল গর্ভধারণে সফল হওয়া সম্ভব। সাধারণত পরবর্তী ঋতুচক্র শুরু হওয়ার ১৪ দিন আগে ওভ্যুশেলন ঘটে। তাই গর্ভধারণের চেষ্টা করার সময় এ বিষয়টি খেয়াল রাখতে হবে।

ওভ্যুলেশনের সঠিক সময় নির্ধারণ

ইয়েল মেডিকেল বিদ্যালয়ের অবসট্রেটিক, গাইনোকোলজি ও রিপ্রোডাকটিভ সায়েন্সের অধ্যাপক মেরি জেন মিনকিন চিকিৎসকের পরামর্শ নেওয়ার আগে নিজে নিজেই ওভ্যুলেশনের সঠিক সময় নির্ণয়ের পরামর্শ দিয়েছেন।

তিনি বলেন, ওষুধের দোকানে কিনতে পাওয়া ওভ্যুলেশন কিট দিয়ে সহজেই এটা পরীক্ষা করা যায়। আর এটা সঠিকও হয়। যদি পরীক্ষায় ধরা পড়ে যে ওভ্যুলেশশন ঘটছে না তাহলে অবশ্যই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হতে হবে। আর ওভ্যুলেশন যদি ঘটে তাহলে এর সঠিক সময় নির্ধারণ করে সেভাবে গর্ভধারণের চেষ্টা করতে হবে।

চিকিৎসককে সব খুলে বলা

যৌনবাহিত কোনো রোগ থাকলে ফ্যালোপেইন টিউব ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। আর এতে গর্ভধারণ কঠিন হতে পারে। কারণ ফ্যালোপেইন টিউব দিয়েই জরায়ুতে পৌঁছায় ডিম্বানু। তাই গর্ভধারণ বিষয়ক চিকিৎসা শুরু করলে চিকিৎসককে অবশ্যই সব খুলে বলা উচিৎ।

স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন

অতিরিক্ত ওজন বা কম ওজনসহ সুস্বাস্থ্যের অনেক বিষয় জড়িত সন্তান ধারণের সঙ্গে। তাই গর্ভধারণের পরিকল্পনা করলে ওজন নিয়ন্ত্রণ, ভিটামিন গ্রহণ, ধুমপান ও মদ্যপান বাদ দেওয়াসহ স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন করা উচিৎ।

সূত্র: রিডার্স ডাইজেস্ট

শরীরচর্চার সঠিক সময় কোনটি?

সুস্বাস্থ্যের জন্য সঠিক খাদ্যাভ্যাসের পাশাপাশি নিয়মিত শরীরচর্চা খুবই জরুরি। একটাকে বাদ দিলে সুফল পাওয়া সম্ভব নয়। তবে দিনের কোন সময়টা শরীরচর্চার জন্য আদর্শ, তা নিয়ে রয়েছে মতভেদ।

আমরা অনেকেই সকালবেলাকে শরীরচর্চার সঠিক সময় মনে করি। বিপাক হার বাড়ানো বা সারাদিনে আরো অনেক কাজের ফাঁকে শরীরচর্চা করার সময় না পাওয়ার অজুহাত এড়াতে এ সময়টাই উত্তম মনে করা হয়। তবে যে ব্যক্তি সাধারণত সকাল সকাল ঘুম থেকেই উঠতে পারে না, তার জন্য এটা কষ্টকর হয়ে পড়ে।

কারো যদি শরীরচর্চা করার নিধিারিত সময় না থাকে, তাহলে দিনের যে কোনো সময় নিজের সুবিধামতো এটা করতে পারে। কোনো ব্যক্তি সন্ধ্যায় ব্যায়াম করলে যদি তার ঘুমের ব্যাঘাত ঘটে তার তার উচিত দিনের শুরুর দিকে তা করা।

শরীরচর্চা অব্যাহত রাখতে হলে এমন ধরনের শরীরচর্চা বেছে নেওয়া উচিত যা থেকে একজন ব্যক্তি আনন্দ পায়। সামাজিক কর্মকাণ্ডে জড়িত ব্যক্তির উচিত সমাজকর্ম সম্পর্কিত শরীরচর্চার ধরন বেছে নেওয়া। যেমন, শরীরচর্চার ক্লাসে যোগ দেওয়া যেতে পারে বা একদল বন্ধুর সঙ্গে গল্প করতে করতে হাঁটা যেতে পারে।

কেউ যদি একা সময় কাটাতে পছন্দ করে তাহলে হাঁটা, সাঁতার বা সাইকেল চালানো তার জন্য ভালো। যে ব্যক্তি পরিবারের সঙ্গে সময় কাটাতে পছন্দ করে সে পরিবারের সবাইকে নিয়েই শরীরচর্চা (যেমন রাতের খাবার খাওয়ার পর হাঁটা) করতে পারে।

দিনের যে কোনো সময়ই করা যায় এমন কিছু শরীরচর্চা হল হাঁটা, দৌড়ানো, জগিং, সাঁতার, নাচ ও এয়ারোবিকস, বাইকিং, সিঁড়ি দিয়ে ওঠা, খেলাধুলা করা, যোগ ব্যয়াম, বক্সিং, কিক বক্সিং, মার্শাল আর্ট ইত্যাদি।

শরীরচর্চার অনেক ধরন রয়েছে। এগুলো থেকে নিজের পছন্দ ও সুবিধামতো বেছে নিয়ে করা যায়। আর একঘেয়েমি এড়াতে একসঙ্গে কয়েকটি শরীরচর্চাও করা যেতে পারে।

সূত্র: হেলদি ফর গুড হার্ট

মাস্ক ব্যবহার কারা করবেন?

চীন থেকে অনেক দেশ ও অঞ্চলের পাশাপাশি বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে তিন রোগী শনাক্ত হওয়ার প্রেক্ষাপটে সচেতনতা হিসেবে অনেকেই মাস্ক পরছেন।

আবার মাস্ক ব্যবহারের পক্ষে-বিপক্ষে মতও দিচ্ছেন অনেকে। ঘুরেফিরে উঠে আসছে একটি প্রশ্নই, করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কতটা প্রতিরোধ করবে ফেস মাস্ক?

মাস্ক ব্যবহার নিয়ে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) কিছু পরামর্শ তুলে ধরা হয়েছে সরকারের এক তথ্য বিরণীতে।

এতে বলা হয়েছে,

* সাধারণভাবে সবার মাস্ক পরার প্রয়োজন নেই।

* তবে করোনাভাইরাসে আক্রান্ত রোগীরা অবশ্যই মাস্ক পরবেন।

* পর্যবেক্ষণে রাখা ও কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিরা এবং তাদের পরিবার পরিজনরাও মাস্ক পরবেন।

* সেবা প্রদানকারী ডাক্তার/নার্স/অন্যান্য স্বাস্থ্যকর্মী/পরিচ্ছন্নতা কর্মীদের মাস্ক পরতে হবে।

* যাদের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা কম যেমন বয়স্ক ব্যক্তি, লিভার/কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস ম্যালাইটাস, স্ট্রোক অথবা ক্যান্সারে ভুগছেন এ ধরনের ব্যক্তিসহ যারা রেডিওথেরাপি বা কেমোথেরাপি নিচ্ছেন, তারাও মাস্ক ব্যবহার করবেন।

বাড়িতে কোয়ারেন্টিনে যা করতে হবে

বিদেশ থেকে আসা ব্যক্তিদের কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কিছু নির্দেশনা মেনে চলার অনুরোধ করেছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর।

সরকারের এক তথ্য বিবরণীতে এসব জানানো হয়েছে।

* কোয়ারেন্টিনে বাড়ির অন্য সদস্যদের থেকে আলাদা থাকতে হবে। তা সম্ভব না হলে অন্যদের থেকে অন্তত ৩ ফুট দূরত্ব বজায় রাখতে হবে। ঘুমানোর জন্য পৃথক বিছানা ব্যবহার করতে হবে। আলো–বাতাস ঢোকে, এমন ঘরে থাকতে হবে।

* সম্ভব হলে পৃথক গোসলখানা এবং শৌচাগার ব্যবহার করতে হবে। সম্ভব না হলে ওই স্থানগুলোতে জানালা খুলে রেখে পর্যাপ্ত আলো-বাতাসের ব্যবস্থা করতে হবে। অন্যদের সঙ্গে ব্যবহার করতে হয়, এমন স্থানের সংখ্যা কমাতে হবে।

বুকের দুধ খাওয়ান এমন মা শিশুকে বুকের দুধ খাওয়াতে পারবেন। শিশুর কাছে যাওয়ার সময় মাস্ক পরতে হবে এবং ভালোভাবে হাত ধুয়ে নিতে হবে।

* কোয়ারেন্টিনে থাকা শিশুকে তার জন্য প্রযোজ্যভাবে বোঝাতে হবে। তাদের পর্যাপ্ত খেলার সামগ্রী দিতে হবে। খেলার আগে ও পরে খেলনাগুলো জীবাণুমুক্ত করতে হবে।

* কোয়ারেন্টিনে কোনো পশুপাখি রাখা যাবে না।

* বাড়ির অন্য সদস্যদের সঙ্গে একই ঘরে অবস্থান করলে, বিশেষ করে এক মিটারের মধ্যে আসার সময় মাস্ক ব্যবহার করা উচিত।

* প্রয়োজনে বাড়ি থেকে বের হলে মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। মাস্ক পরে থাকার সময় এটি হাত দিয়ে ধরা যাবে না। মাস্ক ব্যবহারের সময় সর্দি, থুতু, কাশি, বমি ইত্যাদির সংস্পর্শে এলে সঙ্গে সঙ্গে মাস্ক খুলে নতুন মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। ব্যবহৃত মাস্ক ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলে সাবান–পানি দিয়ে ভালোভাবে হাত ধুতে হবে।

একজনের ব্যক্তিগত সামগ্রী আরেকজন ব্যবহার করবেন না। কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির থালা, গ্লাস, কাপসহ বাসনপত্র, তোয়ালে, বিছানার চাদর অন্য কেউ ব্যবহার করবেন না। এসব জিনিসপত্র ব্যবহারের পর সাবান-পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে হবে।

* কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির ব্যবহৃত বা তার পরিচর্যায় ব্যবহৃত মাস্ক, গ্লাভস, টিস্যু ইত্যাদি অথবা অন্য আবর্জনা ওই ঘরে রাখা ঢাকনাযুক্ত ময়লার পাত্রে ফেলতে হবে। এসব আবর্জনা উন্মুক্ত স্থানে না ফেলে পুড়িয়ে ফেলতে হবে।

* দৈনন্দিন রুটিন, যেমন খাওয়া, হালকা ব্যায়াম ইত্যাদি মেনে চলতে হবে। সম্ভব হলে বাসা থেকে অফিসের কাজ করতে হবে।

* বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা অথবা ওপরের নিয়মগুলোর পরিপন্থী নয় এমন যেকোনো বিনোদনমূলক কাজে যুক্ত হওয়া যাবে।

* পরিবারের কোনো সুস্থ সদস্য অর্থাৎ যাদের দীর্ঘমেয়াদি রোগ যেমন ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যানসার, অ্যাজমা ইত্যাদি নেই, এমন একজন ব্যক্তি পরিচর্যাকারী হিসেবে নিয়োজিত হতে পারেন। তিনি ওই ঘরে বা পাশের ঘরে থাকবেন। অবস্থান বদল করবেন না। কোয়ারেন্টিনে আছেন, এমন ব্যক্তির সঙ্গে কোনো অতিথিকে দেখা করতে দেওয়া যাবে না।

পরিচর্যাকারী খালি হাতে ওই ঘরের কোনো কিছু স্পর্শ করবেন না।

* কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তির সংস্পর্শে এলে বা তার ঘরে ঢুকলে, খাবার তৈরির আগে ও পরে, খাবার আগে, শৌচাগার ব্যবহারের পরে, গ্লাভস পরার আগে ও খোলার পরে বা যখনই হাত দেখে নোংরা মনে হবে, তখনই দুই হাত পরিষ্কার করতে হবে।

* ঘরের মেঝে, আসবাব, শৌচাগার ও বাথরুম প্রতিদিন অন্তত একবার পরিষ্কার করতে হবে। পরিষ্কারের জন্য এক লিটার পানির মধ্যে ২০ গ্রাম বা ২ টেবিল চামচ ব্লিচিং পাউডার মিশিয়ে তা দিয়ে ভালোভাবে মুছে ফেলতে হবে। ওই দ্রবণ সর্বোচ্চ ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত ব্যবহার করা যাবে।

* কোয়ারেন্টিনে থাকা ব্যক্তিকে নিজের কাপড়, বিছানার চাদর, তোয়ালে ইত্যাদি গুঁড়া সাবান বা কাপড় কাঁচার সাবান ও পানি দিয়ে ভালোভাবে পরিষ্কার করতে বলতে হবে। কাপড় ভালোভাবে শুকাতে হবে।

* নোংরা কাপড় একটি লন্ড্রি ব্যাগে আলাদা রাখতে হবে। মলমূত্র বা নোংরা লাগা কাপড় ঝাঁকানো যাবে না এবং নিজের শরীর বা কাপড়ে যেন না লাগে, তা খেয়াল করতে হবে।

* কোয়ারেন্টিনের সময় ফোন, ইন্টারনেটের সাহায্যে যোগাযোগ রাখতে হবে।

* কোয়ারেন্টিনে থাকার সময় কোনো উপসর্গ যেমন ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইটের বেশি জ্বর, কাশি, সর্দি, গলাব্যথা, শ্বাসকষ্ট ইত্যাদি দেখা দিলে অতি দ্রুত আইইডিসিআরের হটলাইন নম্বরে যোগাযোগ করে পরবর্তী করণীয় জেনে নিতে হবে।

* চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী কোয়ারেন্টিন শেষ হবে। চিকিৎসকের সিদ্ধান্তমতে একজন থেকে অন্যজনের কোয়ারেন্টিনের সময়সীমা আলাদা হতে পারে। তবে এ পর্যন্ত পাওয়া তথ্য-উপাত্তের ভিত্তিতে এ সময়সীমা ১৪ দিন।

তথ্য সূত্র: প্রথম আলো