গরুর মাংস কাদের জন্য স্বাস্থ্যকর ?

রেডমিট বা লাল মাংসের ক্ষতিকর দিক সম্পর্কে শুনতে শুনতে অনেকেরই মনে হতে পারে লাল মাংস তথা গরু-খাসির মাংসের বুঝি কোনো ভালো গুণই নেই। আসলে রেডমিট সম্পর্কে সতর্কবাণীর প্রায় পুরোটাই বয়স্কদের জন্য। যাদের বয়স ৩০-এর নিচে, রক্তে কোলেস্টেরল মাত্রা ঠিক আছে, মেদাধিক্য নেই, ওজনও স্বাভাবিক তাদের জন্য লাল মাংসের এই নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা ঠিক হবে না।

রেডমিট বা লাল মাংস অনেকেই পছন্দ করেন, কিন্তু অবাক ব্যাপার হচ্ছে কেউ কেউ গরুর মাংসকে অস্বাস্থ্যকর খাদ্য হিসেবে ভাবতে শুরু করেছেন। এর কারণ হল রেডমিটের পক্ষ এবং বিপক্ষ-দুই দলই চরম পক্ষপাতিত্বের বিবেচনায় রেডমিটকে বিচার করছেন। আসলে কৃশকায় গরুর মাংসকে স্বাস্থ্যকরই বলা চলে। কারণ তাতে কোলেস্টেরল থাকে কম। এ ধরনের গরুর সাধারণ মাংস দৈনিক ৫০ থেকে ১০০ গ্রাম গ্রহণে খুব একটা অসুবিধা নেই।

তবে রেডমিটের এসব ঝুঁকির পেছনে মূলত দায়ী মাংস প্রক্রিয়াজাতকরণ। রেডমিট এককভাবে দায়ী নয়। দেখা গেছে দৈনিক ৫০ গ্রাম প্রক্রিয়াজাত মাংস গ্রহণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে ৪২ শতাংশ আর ১৯ শতাংশ বাড়ে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি। তবে গরুর মাংসের ক্ষেত্রে এই ঝুঁকি কিছুটা কম। রোগের ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি শূকরের মাংসে। প্রক্রিয়াজাত বা প্রসেসড মিটের মধ্যে সসেজ, সালামি, বেকন এবং লাঞ্চন মিটস অনেকেরই পছন্দের খাবার। অবাক বিষয় হচ্ছে, প্রক্রিয়াজাত এবং সাধারণ গরুর মাংসে সম্পৃক্ত চর্বির পরিমাণ প্রায় একই। প্রক্রিয়াজাত গরুর মাংসে কোলেস্টেরল এবং আয়রন কম। তবে প্রক্রিয়াজাতকরণের কাজে ব্যবহৃত লবণের কারণে সোডিয়াম এবং সংরক্ষণে ব্যবহৃত উপাদানের কারণে নাইট্রেট বেশি থাকে।

এই লবণের কারণে উচ্চ রক্তচাপ হয় এবং নাইট্রেটের জন্য রক্তনালির দেয়াল ক্ষতিগ্রস্ত হয়, ইনসুলিন নিঃসরণ কমে গিয়ে ডায়াবেটিস প্রবণতা বাড়ায়। যার ফলাফল হৃদরোগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি।

বেশি বেশি কোনো কিছুই ভালো নয়, তেমনি গরুর মাংসও বেশি খাওয়া ভালো নয়। তবে ঢালাওভাবে সবাই গরুর মাংস এড়িয়ে চলবেন এটা ঠিক নয়। আবারও বলছি, সাধারণ কম চর্বিযুক্ত গরুর মাংস শিশু-কিশোর, তরুণ-যুবার জন্য পুষ্টিকর খাবার হিসেবে বিবেচিত। তবে আগেই বলেছি, বয়স ৩০-এর ওপরে, রক্তে কোলেস্টেরল বেশি, মেদাধিক্য ও বাড়তি ওজনদার মানুষ, ইতোমধ্যে উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন কিংবা আক্রান্ত হয়েছেন হৃদরোগে তাদের জন্য গরুর মাংস তথা রেডমিট এড়িয়ে চলাই মঙ্গলজনক।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *